আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা প্রথম পর্ব সমাপ্ত

আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা প্রথম পর্ব সমাপ্ত

Generic placeholder image
  Ashfak

ইসলাম অনুসারীদের সকল মত-ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে শান্তি বজায় রাখা এবং পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে শান্তিপূর্ণ ভাবে আখেরী মোনাজাত অনুষ্টিত হয়েছে। রবিবার সকালে বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আসরে মাওলানা মু. জোবায়ের অনুসারীদের এই মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ঢাকার কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের আহমদ। লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে সকাল ৯টা ৫৮ মি‌নি‌টে মোনাজাত শুরু ক‌রে ১০টা ২০ মি‌নি‌টে শেষ ক‌রেন। তিনি আরবি ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন। ২২ মিনিটব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা মু. জুবায়ের প্রথম ৯ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৩ মিনিট দোঁয়া করেন বাংলা ভাষায়। ইজতেমা ময়দানে বিদেশী নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। র্দীঘ ২২ মিনিট সময় পুরো ইজতমো ময়দান জুড়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে কিছুক্ষণ পর পর আল্লাহু আমিন আল্লাহু আমিন ধ্বনিতে মুখরিত পুরো টঙ্গী নগরী। মোনাজাতের সময় ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসমুদ্রে পরিনত হয়। উপস্থতি মুসল্লিরা জানান, আখেরী মোনাজাতের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন না থাকায় অনেক মুসল্লি ইজতমোয় অংশ গ্রহন করেতে পারেনি। শীতের সকালে আশপাশের লোকজন ময়দান বা তার আশপাশে পৌঁছানোর আগেই এবং পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই হঠাৎ সকাল ৯ টা ৫৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু করায় অনেকেই মোনাজাতে অংশ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাছাড়া এবার ইজতেমা ময়দানের আশপাশের পর্যাপ্ত মাইকের ব্যবস্থা না থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মোনাজাতে অংশ নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। আখেরী মোনাজাতে আল্লাহতায়ালার প্রতি লাখ লাখ মসুল্লির অশ্রুসিক্ত নয়নে কাকুতি মিনতির মধ্যদিয়ে মাওলানা জোবায়ের পহ্নিদের প্রথমাংশের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার প্রথমাংশের মোনাজাতে যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে সকালেই টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসে। মোনাজাতের আগেই ইজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে যথারীতি তবলিগের ৬ উসুল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহিহ নিয়ত ও তবলিগ বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্বের দুদিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছর মোনাজাতের সময় টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, তুরাগ, কামারপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নেমে আসে আবেগঘন পরিবেশে পিনপতন নীরবতা। মানুষ যে যেখানে ছিলেন সেখান থেকেই মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর ও উত্তরা থেকে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিস বন্ধ থাকলেও স্থানীয় অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানা গুলো ছিলো খোলা। সূত্রমতে, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান জোবায়ের অনুসারী ও সাদ অনুসারীদের মধ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করে স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় তাবলিগের উভয় গ্রুপের উপস্থিতিতে ইজতেমা আলাদা করে দুইভাগে আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তারপরও ইজতেমা ময়দানে বয়ান ও আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করে সরকারের নিয়ন্ত্রনে অনুষ্ঠিত ইজতেমা দুই ধাপে আলাদা আলাদা বয়ান ও মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়। গতকালের মোনাজাত স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। একই ভাবে প্রচারিত হবে সাদ পহ্নিদের ইজতেমা ও মোনাজাত বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সমাপনী ও হেদায়েতী বয়ান : গতকাল আখেরী মোনাজাতের পূর্বে বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান পেশকরা হয়। আখেরি মোনাজাতের আগে সকালে ফজরের পরপর হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে বয়ান করেন পাকিস্থানের মাওলানা খোরশিদুল হক, ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা। বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, যারা দুনিয়াতে দ্বীনের ওপর চলবে, ঈমানকে সুন্দর ও মজবুত করবে, আমলকে সুন্দর করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে কামিয়াবি দান করবেন। ঈমান ও আমল ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব হওয়া যাবে না। আল্লাহকে পেতে হলে নামাজ পড়তে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং জান্নাত লাভের মাধ্যম হলো নামাজ। আরও বলা হয়, পরকালে শান্তি পেতে চাইলে ভালো আমল করতে হবে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের বয়ান শোনেন। বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। এ মেহনত খুলুসিয়াত ও আজমতের সঙ্গে যারা করবে তাদের যেকোনো আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়। পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না। এছাড়াও ইজতেমা ময়দানে দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুরব্বিরা তাবলীগের ছয় উছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ইজতেমা শেষে আগত ১.২.৩ চিল্লার মুসল্লিরা দ্বীনের দাওয়াতি কাজে দেশ বিদেশে বেরিয়ে যাবেন। এবছর বিভিন্ন জল্পনা কল্পনা আর দ্বিধা-দন্ধের মাঝেও দ্বিতীয়া অংশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে মাওলানা সাদ কান্ধলভির বড় ছেলে মুফতি ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভি। এবারের ইজতেমায় তার গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করার কথা রয়েছে। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের বিশ্ব তাবলিগের শুরা সদস্যরা এবার দ্বিতীয়াংশের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। সর্বকালের রেকর্ড করলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা : শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ফজরের পর মাঠে রায়বেন্ডের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্যদিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। ২০২৩ সালের প্রথম পর্বে আলমি শুরার সাথীদের এ বিশ্ব ইজতেমায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লিদের আগমনে র্সবকালের নতুন রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮৭টি দেশ থেকে আসা প্রায় ৫ হাজার র্ধমপ্রাণ মুসল্লিসহ প্রায় ২০ লাখ মুসল্লির কণ্ঠে একই সুর আল্লাহু আমিন ধ্বনি। বয়ান, তাশকিল, তালিম, ইবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়েছে গত দুদিন। শনিবার রাত থেকে বিরামহীন টঙ্গীমুখী মুসল্লিদের গণজোয়ার। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর এবং বিমানবন্দর থেকে জয়দবেপুর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাসে এবার রের্কড সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। যা বিগত বছরের সব রের্কডকেই ভেঙ্গে দিয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে নতুন ১৪টি খিত্তা (নির্ধারিত স্থান) যুক্ত করার মাধ্যমে মাঠের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। আর পুরো ইজতেমাকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এরপরও জায়গা না পাওয়ায় ময়দানের বাইরে রাস্তায় অবস্থান করেন মুসল্লিরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়ক, স্টেশন রোড-কামারপাড়া সড়কসহ ইজতেমার ময়দানে প্রবেশের রাস্তার দুই পাশে মুসল্লিরা অবস্থান নেয়ায় রাস্তাগুলো সংকির্ণ হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও যানবাহন এমনকি হাঁটার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তরা ১০ নং সেক্টরসহ টঙ্গী, উত্তরা, বিমান বন্দর, কামারপাড়া রোডের রাস্তাগুলোতে তাবু ফেলে ও পত্রিকাসহ চট বিছিয়ে মুসল্লিরা মোনাজাতে অংশ দিতে দেখা গেছে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রাস্তায় হাজারো নারী : আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লি গত শনিবার রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়ি, স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন দালানের ছাঁদে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন। এছাড়াও আশপাশের নারীরা আখেরি মোনাজাতের ফজিলত লাভের আশায় মোনাজাতে শরিক হতেই ভোর থেকে ইজতেমা ময়দানের পাশে টঙ্গী হাসপাতাল মাঠ ও স্টেশন রোডের মাঝখানে অবস্থান নিয়ছেন নারীরা। জুম্মার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহন: আখেরী মোনাজাতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এড, মো. আজমত উল্লা খান, জেলা প্রশাসক, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জ ডি আই জিসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নিয়োজিত ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, মোনাজাতের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত ইজতেমাস্থল ও আশে-পাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসী খাদ্য পরিবেশন ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়ের অভিযোগে বিভিন্ন খাবারের দোকান ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাসহ জরিমানা আদায় করা হয়। তবে এরির্পোট লেখা পর্যন্ত কতগুলো দোকান বা প্রতিষ্ঠানে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ইজতেমা ফেরত মুসল্লিদের ভিড় :- প্রথমাংশের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। টঙ্গী ইজতেমা প্রাঙ্গণ থেকে আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া, টঙ্গী বাজার, স্টেশনরোড, চেরাগআলীর সড়ক-মহাসড়কসহ রেলওয়ে ষ্টেশন টঙ্গী, বিমানবন্দর, জয়দেবপুরে মানুষের প্রচন্ড ভিড় এবং মুসল্লিদের ঘরে ফেরার তাগিদ লক্ষ্য করা গেছে। মুসল্লিদের বিড়ম্বনা ও যানজট :- আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পর এক সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ফিরতে শুরু করলে সর্বত্র মহা যানজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী স্টেশনে ফিরতি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমান ট্রেনগুলোতে উঠতে মানুষের জীবন বাজির লড়াই ছিল উদ্বেগজনক। ট্রেনের ভিতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে ও দরজা-জানালায় ঝুলে শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে দেখা যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতি মুসল্লিদের বিড়ম্বনা ও কষ্টের সীমা ছিল না। ইজতেমা উপলক্ষ্যে টঙ্গীতে জমায়েত হওয়া মুসল্লিরা যোহরের নামাযের পর এক যোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে চাইলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। হাজার হাজার বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর ও মহিলাসহ কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে মোনাজাতে শরীক হন এবং একইভাবে ফিরে যেতে দেখা যায়। বিকেলে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এতে মুসল্লিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। দুর দুরান্তের যাত্রীরা রিকসা-ভ্যান, টেম্পু, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখা গেছে। বেতার, টিভি মাইকের মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার : আখেরী মোনাজাতের সময় বেতার ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও মাইকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা থানা ও গ্রামাঞ্চলের লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এছাড়াও এবছর রেডিও- টিভিতে ইজতেমা ময়দানের আশপাশ থেকে মোনাজাত প্রচার করা হয়েছে। এদিকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথমাংশের আখেরি মোনাজাত প্রচারের জন্য গণ যোগাযোগ অধিদপ্তর বা গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে তেম কোন মাইকের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে অনেকেই মোনাজাতে সময় মতো অংশ নিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ময়দানের আশপাশে ময়লার স্তুপ :- ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে টঙ্গী-আশুলিয়া রোডের ফুটপাতে, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে তুরাগ নদের তীরসংলগ্ন এলাকা, টঙ্গী ষ্টেশন রোড এলাকাসহ ঢাকা ময়মনসিংহ রোড ও ইজতেমা ময়দানে প্রথমাংশে অনুষ্ঠিত ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট ও নানা ধরণের আর্বজনার স্তুপ পড়ে আছে। সেগুলো থেকে দূগন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সেগুলো অপসারনের কাজ করতে দেখা গেছে। ভিক্ষুকের আনাগোনা :- বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার আগেই ময়দানের চারপাশের ফুটপাত গুলোতে ভিক্ষুকের আনাগোনা বেড়ে গেছে। নোংরা ও ময়লা কাপড় পরে সাহায্যের জন্য মুসল্লিদের পথ আগলে ধরায় অনেক মুসল্লিরা বিব্রতবোধ করেন। এদিকে বিদেশী মুসল্লিদের নিবাস এলাকায় ভিক্ষুকদের ভিড়তে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষুকদেরকে বারবার বিদেশীদের পথ আগলে ধরে ভিক্ষা চাইতে দেখা গেছে। তাছাড়া এবছর শিশু ও মহিলা ভিক্ষুকদের আনাগোনা নজরে পড়ার মতো। অবৈধ দোকানপাট মুসল্লিদের যাতায়াতে কষ্ট :Ñ ইজতেমা শুরু থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্বেও ময়দানের চারপাশে ভাসমান দোকানদাররা হরেক রকমের দোকানের পসরা সাঁজিয়ে বসায় ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াতে বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। মুসল্লিদের মালামাল কেনার জন্য বিভিন্নভাবে ডাকচিৎকার করে আহ্বান করছেন ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। পুলিশ বার বার তাদের বাধা প্রদান করলেও থামছে না না হকাররা। ইজতেমা ময়দানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা :- রোববার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান ও টঙ্গী আশপাশ এলাকা থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে নেটওয়ার্ক যোগাযোগ ছিলো খুবই দূর্বল। মাঝে মধ্যে লাইন পেলেও মূহুর্তেই কেটে যাচ্ছিল। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো নেটওর্য়াক সুবিধা দিতে ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমার আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত মোবাইল টাওয়ার সংযোগ করলেও এ সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। পরিত্যক্ত জুতা ও পত্রিকার কাগজ :- আখেরী মোনাজাত শেষে হুড়োহুড়ি করে ইজতেমা ময়দান থেকে বের হতে গিয়ে অগনিত জুতা ও সেন্ডেল ফেলেই খালি পায়ে মাঠ ত্যাগ করেন ধর্মপ্রাণ অনেক মুসল্লিরা। এছাড়াও মোনাজাত শেষে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের সড়কগুলোকে বিপুল পরিমাণ পত্রিকার কাগজ, জুতা ও সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। টোকাইরা পরিত্যক্ত জুতা ও সেন্ডেল বস্তায় ভরে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। চিকিৎসা সেবা :- স্বাস্থ্য বিভাগের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক জানান, টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ববধানে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ১১শতকের অধিক মুসুল্লী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া আশে- পাশের বিভিন্ন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে আরো প্রায় ৯ হাজার ৩ শ ২০ জন মুসুল্লীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পকেটমার-ছিনতাইকারী গ্রেফতার :- গত ১০ ফেব্রুয়ারী রাত থেকে ১২ ফেব্রুয়ারী দুপুর পর্যন্ত ইজতেমাস্থলের আশে-পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে টঙ্গী পূর্ব, পশ্চিম, উত্তরা, তুরাগ থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা পুলিশ পকেটমার-ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী পূর্ব থানাসহ আশপাশের থানা পুলিশ। ওজুর পানি ও পত্রিকা বিক্রির ধুম :- বিশ্ব ইজতেমাকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গতকাল বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের পুর্ব মুহুর্তে আশপাশের এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়ায় এবং মুসল্লিরা ময়দানে প্রবেশ করতে না পারায় বাইরে অবস্থান নিলে মোনাজাতের পূর্ব মূহুর্তে ময়দানের আশপাশে প্রকাশ্যে ওজ’ুর পানি বিক্রি করতে দেখা গেছে। পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সংকটে মুসল্লিরা :- অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আগত ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের কাছ থেকে পরিবহন মালিকসহ তাদের শ্রমিক কর্মচারীরা বাংলাদেশ সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়াকে উপেক্ষা করে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করায় মুসুল্লিরা চরম দুর্ভোগ ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে বলে মুসল্লিরা অভিযোগ করেন। ইজতেমায় চাঁদাবাজী : বিশ^ ইজতেমাকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যক্তি রাস্তার পাশে দোকানপাট থেকে এবং আশপাশের খালি জায়গায় স্থানীয় প্রভাবরে জোরে ৫ হাজার থেকে লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিট ভাড়া দিয়ে দোকান ভাড়া, বৈধ-অবৈধ বিদ্যুৎ লাইট কয়েকগুন বেশী টাকায় ভাড়া ছাড়াও বিভিন্ন পরিবহন বাস ট্রাক কাভারভ্যান থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠনের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে, টঙ্গী বাজার, হোন্ডা রোড, আইআরআই রোড, কামারপাড়া, মিলগেইট, মেঘনা রোড়, কামারপাড়া রোড, নিউ অলিম্পিয়া ট্রেক্সটাইল মাঠ, নিউ মন্নু ট্রেক্সটাইল মিলস্ধসঢ়; মাঠ, ষ্টেশন রোড এলাকায় এসব হয় বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
মৃণাল চৌধুরী সৈকত, টঙ্গী 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)