লালমনিরহাট বাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যাত্রা করলো,বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন

Generic placeholder image
  Ashfak

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে অবশেষে বুড়িমারী ঢাকা রেলরুটে যাত্রা শুরু করেছে  আন্তঃনগর ট্রেন 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস'। দীর্ঘ অবহেলিত বুড়িমারীবাসীকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিরও বাস্তবায়ন ঘটেছে।

মঙ্গলবার(১২ মার্চ) দুপুরে ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট জেলার ৩টি সংসদীয় আসনের ৩জন সংসদ সদস্য। উদ্বোধন হলেও ট্রেনটি রয়েছে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনে। এটি নৈশ্যকালিন হওয়ায় সন্ধ্যা ৬টায় ৩০ মিনিটে বুড়িমারী ছেড়ে ঢাকা উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। ৬৩৮টি আসনের মধ্যে প্রথম দিন ৪৩০জন যাত্রী নিয়ে ছুটবে বহুল প্রত্যাশিত বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন। পথ দীর্ঘ হওয়ায় আপাতত ট্রেনটি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে নিয়মিত যাতায়ত করবে। সেক্ষেত্রে বুড়িমারী স্থলবন্দরের যাত্রীদের জন্য একটি শার্টল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় যাত্রা বিরতি দেয়ার কথা থাকলেও আদিতমারী স্টেশন কেটে বড়খাতা ইউনিয়ন লেবেলের স্টেশনে যাত্রা বিরতি দেয়ায় সংক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।

রেলওয়ে সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ও তিনবিঘা করিডোর পরদির্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি বুড়িমারী থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকায় চলাচলের জন্য একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রেনটি চালুর সম্ভবতা যাচাই করতে ২০১৮ সালের ১৬ জুন লালমনিরহাট বুড়িমারী রেলপথ পরিদর্শন করেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। পরে ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সেসময় বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুত চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। দীর্ঘ প্রতিশ্রুতির পরেও জেলাবাসীর দাবি পুরন না করায় অনেকটা হতাশায় পড়েন লালমনিরহাটের মানুষ।

অবশেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ১৪টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর ৬ ডিসেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পরীক্ষামুলক ভাবে গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস। এরপর 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' ট্রেনের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত ছিল গত বছরের ৩০ নভেম্বর। পরে সেটি পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ৬ ডিসেম্বর। এ দিনটিও পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ১৬ ডিসেম্বর। সেদিনও উদ্বোধন করা হয়নি ট্রেনটি। পরে তারিখ পুননির্ধারণ করা হয়েছিল নতুন বছরের ১ জানুয়ারি। এরপর ১৮ ফেরুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও উদ্বোধন হয়নি ট্রেনটি। অবশেষে  মঙ্গলবার (১২ মার্চ) নতুন করে উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করে টিকিট বিক্রি শুরু করে রেলওয়ে দপ্তর। ট্রেনটি চালু হলে বুড়িমারী থেকে ঢাকার যোগাযোগের চিত্র বদলে যাবে। এতে লালমনিরহাটসহ এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সুচনা হবে।

শনিবার (৯ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখার উপ-পরিচালক (টিটি) মো. শওকত জামিল মোহসী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশপত্রে ট্রেনটি উদ্বোধনের বিষযটি জানানো হয়। ঢাকা থেকে বুড়িমারী (৮০৯) বুড়িমারী এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার এবং বুড়িমারী থেকে ঢাকা বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) এর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ১৪ কোচের ট্রেনে মোট আসন থাকবে ৬৩৮/৬৫৩টি। ট্রেনের রেক বেজ ও ওয়াটারিং করা হবে লালমনিরহাটে এবং ক্লিনিং করা হবে বুড়িমারীতে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর ও লালমনিরহাট জেলার সাথে ঢাকার যোগাযোগ সহজ করতেই বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়। নাম বুড়িমারী হলেও যাত্রা করবে লালমনিরহাট থেকে। সেক্ষেত্রে বাকী ৪টি উপজেলার মানুষ বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। অপর দিকে ট্রেনটির মুল সুবিধা পাচ্ছেন রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও নাটোর জেলার যাত্রীরা। লালমনিরহাট থেকে যাত্রা করলেও জেলায় যাত্রা বিরতি নেই অথচ বগুড়া গাইবান্ধা রংপুর ও নাটোরে ৭টি স্থানে যাত্রা বিরতি রাখা হয়েছে। এতে উচ্ছাসের চেয়ে ক্ষুব্ধই লালমনিরহাটের মানুষ।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন বলেন, বুড়িমারী এক্সপ্রেস লালমনিরহাট জেলার মানুষের জন্য হলে বুড়িমারী থেকে যাত্রা করত এবং জেলা অতিক্রম করে সোজা ঢাকায় যাত্রা বিরতি হত। তা করা হয়নি। নাম বুড়িমারী দিয়ে জেলাবাসীকে শান্তনা দেয়া হয়েছে আর সুবিধা দেয়া হয়েছে অন্য জেলাকে। বুড়িমারীর ট্রেন বুড়িমারী থেকেই চাই।

লালমনিরহাট ১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন এমপি, লালমনিরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, লালমনিরহাট ৩ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান, সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমি, রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার, লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার আব্দুস সালাম, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধন করা হলেও ট্রেনটি নির্ধারীত সময় সন্ধ্যা ৬টায় ৩০ মিনিটে বুড়িমারী স্টেশন ছেড়ে যাবে।

উদ্বোধনী দিনে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনে চালকের দায়িত্বে রয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম এবং পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন শাহিন মিয়া।
এস.বি-সুজন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)