বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে অনীহা জবির কতিপয় শিক্ষকের


আঠারো পেরিয়ে উনিশে পদার্পণ করবে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের অন্যতম স্থান বলে পরিহিত, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন এক অনন্য ভূমিকায় আসীন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের পথকে সুগম করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক সিনিয়র শিক্ষক মাসের অর্ধেকের বেশী দিন থাকেন অনুপস্থিত। ডেস্কে জমে থাকে ধুলো আর রুমের বাহিরে ঝুলে তালা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। আছে শিক্ষকদের বসার জায়গার অভাব। কিছু কিছু বিভাগের এক কক্ষে ৬ জনের অধিক সহযোগী অধ্যাপক বসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে শিক্ষকদের এ ঘটনা পুরোপুরি নতুন নয়। পূর্বে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধিক দায়িত্বে আসীন থেকে যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত শিক্ষকদের নেয়া হয় না ছুটি বা কোনো অনুমতিপত্র।
তিন মাসের বেশী সময় ধরে পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগে সিনিয়র বেশ কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতি মাসে পাঁচ বা ছয় দিন।
বিভাগের অফিসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিভাগে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষক ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকায় প্রায়ই ক্লাস মিস হয়। এমন কি কখনো কখনো রাতে অনলাইনে ক্লাসে একাধিক চ্যাপ্টার পড়িয়ে শেষ করে দেওয়ার ঘটনাও আছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এমন ঘটনা একেবারেরই অনৈতিক। নীতিগত দিক থেকে এটি একবারেই যায় না। শিক্ষকদের মূল দায়িত্বই শিক্ষার্থীদের তৈরি করা। সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার পরিবেশ বজায় রাখা। যেসকল শিক্ষক এএমন করছেন তারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠকাচ্ছে। তারা আমাদের জাতিকে ঠকাচ্ছে। "
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান বলেন, " বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের মূল লক্ষ্যই থাকে জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান সৃষ্টি। যে সকল শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেছেন না তাদের তো বেতন নেওয়া টাই হালাল হচ্ছে না। বিষয়টিতে প্রশাসন যদি রেপিড সার্ভে করে আর যথাযথ ব্যবস্থা নেয় তাহলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সংকটের মাঝেও আমরা থেমে থাকছি না। চেষ্টা করছি নিজেদের মতো। তবে আমাদের মধ্যেই যদি এমন পিছুটান থাকে তবে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য অর্জনই ব্যাহত হবে।
অমৃত রায়, জবি প্রতিনিধি