ডাকের পোস্টমাস্টার আজাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ
সরকারি ডাক বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনামে তা প্রতিয়মান হয়।সবকিছু অনলাইন হওয়া,ডাকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর অবস্থানে আগের তুলনায় দুর্নীতি কমলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা এগুলোকে তোয়াক্কা না করে দুর্নীতি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
সঞ্চয়পত্র ফরম বিক্রি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা, প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের অর্থ উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের চেষ্টা, ডাকের টাকা নিজ বাসায় নিয়ে রাখা,নিজ কর্মস্থলের নাইটগার্ডকে ফাঁসানোর চেষ্টা,অবৈধ উপার্জনের টাকায় গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তি ক্রয় সহ নানা অভিযোগ উঠে পোস্টমাস্টার আজাদের বিরুদ্ধে।
মো: আজাদ হোসেন, বর্তমান সদরঘাট ডাক বিভাগের পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রামের বাড়ি বরিশালে। এর আগে গুলশান পোস্ট অফিসে কর্মরত ছিল।
জানা যায়, সরকারিভাবে সঞ্চয়পত্র ফরম ফ্রিতে দেওয়া হলেও ফরম নেই বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়। অনেক সময় গ্রাহক বুঝে টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়।গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের টাকা উত্তোলনের সময় টাকার বিনিময়ে অন্যদের আগে সেবা দেওয়া হয়। সরকারি সেবার নামে অভিনব কায়দায় দিনের পর দিন প্রতারণা করে যাচ্ছে আজাদ। গুলশানে কর্মরত থাকা অবস্থায় কৈশলে গ্রাহকদের সঞ্চয় পত্রের অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে উত্তোলন করতেন তিনি। অনেক সময় গ্রাহকরা বুঝতে পারলে অফিসের কম্পিউটার অপারেটর এর ভুল হয়েছে বলে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ডাকের টাকা নিজ বাসায় নিয়ে রাখার অভিযোগ আছে তার বিরূদ্ধে। তবে বর্তমানে সকল কিছু অনলাইনে হওয়ায় ডাক বিভাগের এ ধরনের প্রতারণা অনেকটাই নির্মূল হয়েছে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক গুলশান ডাক বিভাগে একজন কর্মকর্তা বলেন, আজাদ স্যার থাকা অবস্থায় গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের টাকা নিয়ে প্রায় ঝামেলা হতো। তবে তিনি চালাক প্রকৃতির লোক হওয়ায় গ্রাহকদের কৌশলে ম্যানেজ করে ফেলতেন।
সদরঘাট ভিক্টোরিয়ার পাশে বসবাসরত ওমানের প্রবাসী শাহীন জানায়, তিন মাসের ছুটিতে দেশে আসি।সঞ্চিত কিছু অর্থ সঞ্চয়পত্র কেনার লক্ষ্যে সদরঘাট ডাক অফিসে আজাদ সাহেবের কাছে যাই। প্রথমে সঞ্চয়পত্র ফরম নেই বললেও টাকা খরচ করলে সব কিছু উনি করে দিবেন বলে জানান তিনি।
বিগত প্রায় আড়াই বছর আগে নিজের ছেলের অপকর্ম ঢাকতে নিজ কর্মস্থল গুলশান ডাক অফিসের নাইটগার্ড সিদ্দিককে ফাঁসানোর চেষ্টা চালায় আজাদ।
ভুক্তভোগী সিদ্দিক বলেন,আজাদ স্যারের বাসার বাজার সহ নানা কাজ করতাম আমি।সেই সুবাদে স্যার এর পরিবারের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক হয় আমার।আজাদ স্যারের ছেলে তার বাসায় কাজের মেয়ের সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করে। তার ছেলেকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ দোষ আমার ওপর দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এমনকি আমি স্বীকার করলে মোটা অংকের টাকার অফার করেন তিনি। আমি ভীত হয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই। আর এতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করেছিল। ভিবিন্ন সময় তিনি ডাকের অফিসের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন।
চা দোকানি সিদ্দিকের চাচাতো ভাই জানায়,আজাদ অনেক চালাক প্রকৃতির লোক। আমার চাচাকে সহজ সরল পেয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে তা পারেনি। শুনেছি সে অনেক টাকার মালিক। গ্রামে অনেক জমি ক্রয় করেছেন তিনি।
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আজাদ বলেন, এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট।আমি একজন সহজ সরল মানুষ, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসময় তিনি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন করে তার ভাতিজা সাংবাদিক বলে কথা বলতে বললে নয়ন নামে একজন বলেন,ভাই উনি আমার চাচা হয়। আমার চাচা ডাকের সব কিছু বিক্রি করে খেয়ে ফেলুক কোন সমস্যা নাই।আপনারা ঐখান থেকে চলে যান।এসময় তিনি একটি বেসরকারী টেলিভিশনের পরিচয় দেয়।
নাইটগার্ড সিদ্দিককে ফাঁসানোর চেষ্টা সহ নানা অপকর্মে আজাদকে সে সময় গুলশান ডাক বিভাগ থেকে সদরঘাট ডাক বিভাগে বদলি করা হয়।
অবৈধ পন্থায় টাকা উপার্জন,সম্পত্তি ক্রয় সহ নানা অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন থাকছে আগামি সংখ্যায়।দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক বিজয় বাংলাদেশ এ।
শাহাদাৎ হোসেন (ইমরান)