গাজীপুরে নিখোঁজের পর শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার

গাজীপুর মহানগরের গাছার থানাধীন দক্ষিণ খাইলকুর এলাকা থেকে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরে স্থানীয় বগারটেক এলাকায় নিজ প্রাইভেটকারের ভেতর স্বামী স্ত্রী দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ।
গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের পর পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করেছে নিহতদেন স্বজনরা। শিক্ষক দম্পতি একসঙ্গে গাড়িতে করে বাসার উদ্দেশে স্কুল হয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তাদের পরিবার, আত্বীয় স্বজন ও সহকর্মীরা। জানা যায়, একেএম জিয়াউর রহমান (৫০) টঙ্গীর শহীদ স্থৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মোসা: মাহমুদ আক্তার জলি (৩৭) টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা পরিবার নিয়ে গাজীপুর মহানগরের ৩৬ নং ওয়ার্ডের গাছা থানাধীন কামারজুড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। ঘটনাটি জানাজানির পর পুরো গাজীপুর জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং স্কুল দুটিসহ শিক্ষক দম্পতির গ্রামে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। নিহত শিক্ষক দম্পত্তির ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ জানান, সবশেষ গত বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। ওই সময় তার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। মায়ের কন্ঠ ভার ছিল। তারপর আর কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। মেরাজ বলেন, আমরা রাতভর খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাচ্ছিলাম না। ভোরের দিকে স্থানীয় বগারটেক এলাকা থেকে গাড়ির ভেতর চালকের আসনে বাবা ও পাশে মায়ের মরদেহ পাওয়া যায়। সেখান থেকে প্রথমে তাদের তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জিয়াউর রহমান টঙ্গীর শহিদ স্থৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে সেখানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার স্ত্রী মাহমুদ আক্তার জলি টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ধারনা করা হচ্ছে এ ঘটনাটি সূপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। নিহত জিয়াউরের বড় ভাই মো. রিপন বলেন, এটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই নেয়নি কেউ। ঘটনাটি যদি ছিনতাইকারী কিংবা দুর্বৃত্তরা ঘটাতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেতো। কিছুই নেয়নি। শুধু জান দুটো নিয়ে গেছে। নিহত প্রধান শিক্ষক ড্রাইভিং সিটে ছিলেন। তার হাতটিও গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ছিল। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনও পাওয়া গেছে। জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রীর মানিব্যাগ ও ভ্যানিটি ব্যাগ গাড়িতেই ছিল। সব মিলিয়ে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ, এমনটাই জানালেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। এব্যাপারে গাজীপুর মহানগর গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দলাল চৌধুরী বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি পূর্বক ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত র্রিপোট না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ দক্ষিন) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাৎক্ষণিভাবে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। খুব শীঘ্রই ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
মৃণাল চৌধুরী সৈকত, টঙ্গী