গাজীপুরের টঙ্গীতে সম্পত্তির লোভে ছয় মাসের গর্ভবতী মেয়েকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন জন্মদাতা পিতা। এলাকায় এখবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত পিতা নজরুল লস্কর পলাতক রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাতে। এঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। ভুক্তভোগী রিমা বেগমের দায়ের করা অভিযোগে জানা যায়, দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি সাতাইশ চৌরাস্তায় নানার বাড়িতে থাকেন। তার কোন ভাই নেই, তারা তিন বোন। মা মারা যাওয়ার পর বাবা কৌশলে মায়ের নামের বাড়িসহ জমিজমা তার বোন সুমা, রুমা, ভগ্নিপতি নজরুল সিকদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিক্রির পায়তারা শুরু করে। ওই চক্রটি বেশ কয়েকবার স্বাক্ষর নেয়ার জন্য তাকে চাপ দেয়। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় তাদের সাথে রিমার দ্বন্দ্ব বাঁধে। এঘটনার জেরে তার ওপর ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা করা হয়। রিমা আরো জানান, গত কয়েকদিন আগে তিনি পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করে তাদের হাত থেকে রক্ষা পান। ওই হামলাকারীরা তার দুই অবুঝ শিশুকে স্কুলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দেয় এবং ভয়ভীতি দেখায়। এ সংক্রান্তে গত ২২ নভেম্বর টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-৯৮০) দায়ের করেন রিমা। এরই জের ধরে চক্রটি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তার বাসায় ফের হামলা চালায়। তারা বাসার কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে বাসার দরজা ভেঙ্গে তার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে এলোপাথারি কিল, ঘুষি মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। এসময় তার অবুঝ মেয়েরা কান্না শুরু করলে তাদেরকে জোরপূর্বক অন্য কক্ষে আটকে রেখে মারধর করে। তিনি ৬ মাসের গর্ভবর্তী হওয়া সত্ত্বেও তার পেটে নির্দঘভাবে আঘাত করে হামলাকারিরা। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তার মামী সুমী আক্তার ৯৯৯-এর ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চায়। এতে কোন সাড়া না পেয়ে তারা নিরাশ হয়ে পড়েন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এবিষয়ে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করা হলে অভিযুক্ত নজরুল লস্করের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এঘটনায় যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত রুমা আক্তার জানান, জমি নিয়ে রিমার সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে। বাবা মেয়েকে মারতেই পারে। রাগের বশবর্তী হয়ে বাবা আমার বোনকে দু-চারটি চর থাপ্পড় মেরেছে। এব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, এটি একটি পারিবারিক বিরোধ। এঘটনায় ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে কোন মেসেজ পাইনি। তবে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভুক্তভোগী মহিলার স্বজনদের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৃণাল চৌধুরী সৈকত, টঙ্গী