আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কয়েকজন বেঈমান মুনাফিক ছাড়া এখনও বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধুর জন্য কাঁদে।
তিনি বলেন, খুনিরা চেয়েছিল এ দেশের স্বাধীনতা যেন না থাকে, জাতীয় পতাকা যেন না থাকে। ইতিহাস বিকৃতির ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা দেখেছি। কিন্তু সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ (ভার্চুয়াল) করে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এ সভার।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শোকাবহ যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
এরপর বঙ্গবন্ধুর কর্মময় ও সংগ্রামী জীবনের ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
এছাড়া আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন থেকে আমাদের বিজয় এসেছে তারপর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে একটা গভীর চক্রান্ত কাজ করছিল। আমাদের এই বিষয়টা যেন আমরা ধরে রাখতে না পারি সে জন্যই তারা এই ষড়যন্ত্র করে আসছিল।
জয়ের পতাকা লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত উড্ডীয়মান হয়েছিল সেই পতাকা যেন না থাকে এটাই ছিল তাদের প্রচেষ্টা। জাতির পিতার নাম তো মুছে ফেলা হয়েছিল। এ নাম নেয়া যাবে না। ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো যাবে না।
স্বাধীনতার ঘোষক সৃষ্টি হলো। অর্থাৎ ইতিহাস বিকৃতির ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা দেখেছি। কিন্তু সত্যকে কেউ কখনো চাপা দিতে পারে না, মুছে ফেলতে পারে না এটা প্রমাণিত। স্বাধীনতার জন্য দেয়া ডাক ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যদলিলে স্থান পেয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব। এ জন্য বিরাট আয়োজন। জাতিসংঘ আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে এটা উদযাপন করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের এই করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মানুষকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে।
আপনাদের সঙ্গে উপস্থিত থেকে হয়তো এই সভা করতে পারতাম। কিন্তু করোনার কারণে আজ ভার্চুয়ালি করতে হচ্ছে। আজ আমরা অনলাইনে আলোচনা সভা করছি।
সেটাও বলব যে ২০০৮ সালে আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলাম তা বাস্তবায়ন করেছি বলেই আজ এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি না করতাম তাহলে আজ এই সুযোগে হয়তো হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাব যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। প্রবৃদ্ধি আমরা ৮.২ ভাগে উন্নীত করেছিলাম।
আরও পড়ুনঃবাসের সঙ্গে প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ,নিহত ৬
এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা প্রবৃদ্ধি ৭.২ ভাগ অর্জন করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সবকিছুই থেমে যায়। প্রবৃদ্ধি ৫.৮ ভাগে নেমে আসে। আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে এই অবস্থার মধ্যেও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা মানুষের জন্য কাজ করব।
বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন না খেয়ে না থাকে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন গৃহহারা না থাকে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন অভাবে কষ্ট না পায়, শিক্ষার আলোয় মানুষ যেন আলোচিত হয়, সকলের জীবন যেন সুন্দর হয়, এটাই তো ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন ও লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকদিন আগে একুশে আগস্ট চলে গেল। ২০০৪ সালে এই দিনে আমাদের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। মানবঢাল তৈরি করে আমাকে রক্ষা করা হয়েছে। সেদিন আল্লাহ নিজে বাঁচিয়েছেন, রক্ষা করেছেন।
যেভাবে শত্রুরা তৈরি হয়ে এসেছিল এবং আক্রমণ করেছিল মনে হয়েছে যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণ হয়েছে। আমরা ছিলাম নিরস্ত্র মানুষ। ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুম, অত্যাচার নির্যাতন ও দুর্নীতিসহ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ করছিলাম।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে আমরা নিজেরাই সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হই। এত লোককে মারল কিন্তু সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
বরং বোমা হামলায় যারা কাতরাচ্ছিলেন তাদের যারা উদ্ধার করতে গিয়েছিল তাদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আক্রমণকারীরা যেন নির্বিঘ্নে ওই স্থান ত্যাগ করে চলে যেতে পারে সেই সুযোগ পুলিশ সৃষ্টি করেছিল।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আব্দুল আলিম, আব্দুল মান্নান থেকে শুরু করে রাজাকারদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী এবং উপদেষ্টা বানিয়েছিল। খালেদা জিয়া ঠিক একইভাবে সেই নিজামী, মুজাহিদ থেকে শুরু করে যারা বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের মন্ত্রী এবং ভোটচুরি করে খুনি রশিদ এবং হুদাকে পুরস্কৃত করেছিল।
হুদাকে বিরোধীদলের চেয়ারে বসিয়েছিল। খুনি রশিদকে কেন পার্লামেন্টে বসানো হলো এর জবাব কি বিএনপি দিতে পারবে? বুদ্ধিজীবী হত্যা সন্ত্রাস ও সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরই তারা নেতা বানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি শুধু একটা কথা মাথায় রেখে এই জন্য যে আমার পিতা তার সারাটাজীবন উৎসর্গ করেছেন।
তার পাশে থেকেছেন আমার মা সবসময়। তিনি যে আদর্শ নিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন সেই আদর্শ আমরা বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাদের ভোট দিয়েছেন।