চিকিৎসার নামে টঙ্গীর সরকারী হাসপাতালসহ বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়ানগষ্টি সেন্টারে চলছে রমরমা বাণিজ্য

Generic placeholder image
  Ashfak

গাজীপুরের টঙ্গীতে বেড়েছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টার। সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টার চলছে জমজমাট বানজ্যি। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই অনুমোদনহীন। নেই নির্ধারিত চিকিৎসক ও নার্স তারপরও সেখানে জটিল রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অপারেশন করা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত দালালের হাতে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। সেই সাথে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার হাসপাতালকে কেন্দ্র করে আশেপাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। থেমে নেই সরকারী হাসপাতালের বানিজ্য। সরকারী হাসপাতালে দালাল থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয়, আউট সোসিং কর্মচারী, ইমারজেন্সি ব্রাদার, নার্স, রোগীদের খাদ্য তালিকা, প্যাথলজি বিভাগসহ পুলিশ মামলায় সার্টিফিকেট বানিজ্য চলছে হরদম। হাসপাতালের আবাসিক বাসায় হাসপাতালের স্ধসঢ়;ঠাফ দ্বারা াপ্রকাশ্যে চলছে অবৈধ এমআরডিএনসি। এসব জানার পরও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার,আবাসিক মেডিকেল অফিসার, তত্বাবধায়ক নেই কোন কার্যত ভূমকিা। যেনো দেখার কেউ নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দালালের মাধ্যমে রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে চিকিৎসার নামে রমরমা বাণিজ্য। ঢাকা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানান, টঙ্গী এবং গাজীপুরে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টারগুলো আবেদন ছাড়াই এবং লাইসেন্সবিহীন। এসব বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। ডায়গনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করতে খরচ পড়ে ৪০/৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নাকোডিস অনুমোদন, কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সাটিফিকেট এবং ফায়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রে নবায়নের আলাদা টাকা খরচ করতে হয়। সেই হিসাবে ওইগুলো নবায়নের জন্য খরচ ধরলে বছরে গাজীপুর ও টঙ্গীর প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হবে কোটি কোটি টাকা। টঙ্গীতে প্রায় শতাধিক হাসপাতাল ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র গুটিকয়েক। এছাড়া লাইসেন্স পেয়েও বছরের পর বছর নবায়ন না করেই ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার চলছে এমন সংখ্যাও কম নয়। প্রতষ্ঠিান চালানোর সরঞ্জামাধি বা ১৫ বা ২০ সিটের অনুমোদন নিয়ে কর্তৃপক্ষ গুলো প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে অনেকটা আতুর ঘরের মতো। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাধি যেমন নেই ঠিক তেমনী নেই প্রয়োজনীয় ল্যাব প্যাথলজী কিংবা প্রয়োজনী ডাক্তার বা সেবক/সেবিকা। এসব ক্লিনিক, ডায়ানগিষ্ট বা হাসপাতালগুলোতে সার্জারীর ক্ষেত্রে অজ্ঞান করার একজন এনেথেসিয়া পুরুষ ডাক্তার অথবা সেবিকা বা সেবক দিয়ে অহরহ করা হয় সিজার বা বিভিন্ন রোগের অপারেশন। অনেক ক্ষেত্রে সেবক বা সেবিকারা নিজেরাই ডাক্তার সেজে রোগেীদের প্রেসকিপশন বা পরামর্শপত্র লিখে ডাক্তারের নামে স্বাক্ষর করেন, এমন অভিযোগও রয়েছে একাধিক। এছাড়া টঙ্গীর ষ্টেশন রোডে সরকারী শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালের ৩/৫ গজের মধ্যে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ১০/১১ টি ক্লিনিক ও হাসপাতালসহ টঙ্গী বাজার, মধুমতিা, টিএন্ডটিে চেরাগআলী, হোসেন মার্কেট, গাজীপুররা, বড়দেওড়া, সাতাইশ রোড, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি, বাসন, গাছা, বাইপাস চৌরাস্তা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, সালনা, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, গাজীপুর সদর, মাওনা, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, পূবাইল এলাকাগুলো যেনো সম্প্রতি হাসপাতাল বা ক্লিনিক এমনকি ডায়ানগিষ্টরে অভয়রাণ্য অথচ নেই মান-সম্মত চিকিৎসা সেবা। বরং সরকারী হাসপাতালগুলোতে মান সম্মত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকলেও হাসপাতালে দালাল আর আউট সোসিং কর্মচারী আর সরকারী চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী বিশেষ করে বিভিন্ন বিভাগের সেবক সেবিকা এবং কতিপয় অর্থলোভী সরকারী ডাক্তারগনের কারণে সরকারী হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে সাধারণ রোগীরা হয়রানীর শিকার হয়। বিশেষ করে টঙ্গীস্থ শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতাল এবং গাজীপুর সদরে শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ দৃশ্য যেনো নিত্যদিনে নিত্য সময়ের। হাসপাতালগুলোর সুইপার থেকে ডাক্তার সব জায়গাতেই দালাল, আউট সোর্সি ও সেবক সেবিকাদের রাজত্ব। নেপথ্যে হাসপাতালের উর্দ্ধতন কর্তাব্যক্তিরা তো রযেছে ধরাছোয়ার বাইরে। ইমারজেন্সি বিভাগের সেবক ইনচার্জ থেকে কর্তব্যরত ডাক্তার, রোগেীদের খাদ্য সরবরাহকারী থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ইনচার্জ, ল্যাব প্যাথলজি, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ইএমও, আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও সর্বত্রই চলে ধান্ধা। আর সেগুলো চলে, টঙ্গী ও উত্তরার বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়ানগিষ্ট, ক্লিনিক, হাসপাতালের দালাল, সরকারী হাসপাতালের সেবক/সেবিকা, আউট সোসিং কর্মচারীসহ বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। টঙ্গীর সরকারী হাসপাতালের স্টাফ কোয়াটার বা আবাসিক বাসাগুলোতে হাসপাতালে কর্মরত সেবিকা বা অনভিজ্ঞ কতিপয় নারীদের দ্বারা দিনে রাতে প্রকাশ্যে চলে এমআরডিএনসি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সবকিছু জানার পরও নেন না কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বা আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে এসব বিষয়ে জি¹েস করা হলে, উনাদের উত্তর হলো আপনার কাছে এই প্রথম শুনলাম, কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। সম্প্রতি টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার একটি মারামারি ও কোপাকুপির ঘটনায় মূমুর্ষ ও রক্তাক্ত অবস্থায় এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে মামলা করার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ’’ওই নারীর ক্ধিসঢ়;ছুই হয়নি’’ বলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট প্রদান করেন। ওই সার্টিফেকেটের বিরুদ্ধে বাদীনি তত্বাবধায়ক বরাবর লিখিত দেয়ার পরও হয়নি তার সূরাহা। অথচ সে সময় তত্বাবধায়ক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানান, ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি হয়েছে, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে টাকা এবং স্থানীয় প্রভাবের কাছে প্রমাণ বিলিন হয়ে গেছে বলে দাবী করেন ভূক্তভোগী ওই নারী। সূত্রটি আরো জানায়, সরকারী হাসপাতালে আউট সোসিং ও ইমারজেন্সি কর্মচারীদের সহযোগীতায় দালালদের দাপট এতটাই যে, রাতদিন ২৪ ঘন্টা হাসপাতাল থেকে রোগী ছিনিয়ে নেয়া, লাশ আটকিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা, হাসপাতাল অভ্যন্তরে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স রেখে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স না চালাতে দেয়া, নারীদের হাসপাতাল চত্বরে পেটানো বা সাধারণ রোগীদের জিম্মি বা হয়রানী করা যেনো নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ এবং জেলা সিভিল সার্জেনের সঠিক তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়ানগিষ্ট সেন্টারের কর্মকর্তা কর্মচারী এমন একাধিক ব্যাক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ক্লিনিকের জন্য লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন এবং ভ্যাট দিতে হয় ৬৫/৭০ হাজার টাকা। স¦াস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, একটি হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ সনদ, নিয়মিত নবায়ন, নারকোটিক পারমিট [প্রযোজ্য ক্ষেত্রে] পরিবেশগত ছাড় পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা [ক্ষতিকর ও অক্ষতিকর] সংক্রান্ত ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি সংরক্ষণ করতে হয়। এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক বা ডায়ানগিষ্ট সেন্টারে গিয়ে প্রায় প্রতিটিতে রাজধানী ঢাকার নামীদামী হাসপাতালের নামকরা বিশেষজ্ঞ চিকিসৎসকদের তালিকায় দেখা যায়, কিন্তু খোজ নিয়ে জানা যায়, এসব ডাক্তারের অধিকাংশই আসেন না এসব হাসপাতাল ক্লিনিক বা ডায়ানগিষ্ট সেন্টারে। এসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেন কর্তৃপক্ষ। যদিও তাদের অনেকের অনুমোদন নেই। সূত্র জানায়, প্রতিটি ১০ শয্যা ক্লিনিকের জন্য তিনজন ডাক্তার, ডিপ্লোমা ধারী দুজন নার্স ওতিনজন সুইপার থাকবেন। ৮০০ বর্গফুট জায়গা, সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার, নার্স ও সুইপার থাকতে হবে। একই সঙ্গে মাইক্রোস্কোপ, ফ্রিজ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। খোজনিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যে সব লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, অনিয়ম রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে। টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুর জেলা বা মহানগরের ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে নিয়ম অনিয়মের বিষয়টি দেখবেন সিভিল সার্জন। আমার বদলী হওয়ায় আমি চলে যাবো। জেলা সিভিল সার্জন বলেন, আমরা এ পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া গাজীপুর নগর ও জেলায় বিভিন্ন স্থানে যেসব ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম পাওয়া গেছে তাদের নোটিশও দেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন আরো বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনা, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও লাইসেন্সের কাগজপত্রে ক্রটি তাদের জেল ও অর্থদ-সহ বিভিন্ন ধরনের সাজা হতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভিগের সহযোগিতায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মৃণাল চৌধুরী সৈকত, সিনি: স্টাফ রিপোর্টার
 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)