ভোটের হাওয়া:লামা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এ সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন

Generic placeholder image
  Ashfak

পার্বত্য (বান্দরবান) লামা আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২৪ এ হেভিওয়েট সম্ভাব্য প্রার্থী বেশ কয়েক জন। এবছর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছেনা। এমনটা ঘোষণার পর পার্বত্য লামায়  আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নতুন মেরুকরণের সুর বাজতে শুরু করেছে। জানাযায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার কৌশলগত কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে আগের অবস্থান থেকে একটু নড়ে বসেছেন। বর্তমান সরকার পরপর টানা চারবার ক্ষমতায় এসে সারা দেশে আশাতীত উন্নয়ন করেছেন। এতসব উন্নয়নের পরও সাধারণ মানুষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ্ট নয়। কারন আবহমান কাল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গ্রামীন ভোট সংস্কৃতিতে নানা সমিকরণ রয়েছে। এসব নির্বাচনে গ্রামগঞ্জের উন্নয়ন ও দলীয় স্বার্থের চেয়ে বংশ বা গোত্রীয় বিষয়গুলো গ্রামীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। যা কোনো দল মত নির্বিশেষে, সার্বজনীন অংশ গ্রহনে প্রভাবমুক্ত উৎসবমূখর পরিবেশে। এসব হিসেব নিকাশের ফলাফল নির্ণয় করতে আরম্ভ করে দিয়েছে সাধারণ মানুষ। গ্রামের দোকানপাট থেকে শহরের রেস্তোরাঁ সর্বত্রই আলোচনায় নির্বাচনের বিষয়টি ঝড়ের গতি পাচ্ছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বৃহত্তর লামা উপজেলায় কারা প্রার্থীতা করবেন; এমন সুর ব্যাঞ্জনায় উচ্চারিত হচ্ছে অনেকের নাম। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাদের নাম শুনা যাচ্ছে, তারা হলেন; বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার, গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়ায়চিং মার্মা। 
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ৭১'র রণাঙ্গনের বীর সেনানি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ আব্দুল হামিদের ভাতৃপুত্র তিনি। বিগত শতাব্দীর ৮০'র দশকে লামায় রাজপথে আওয়ামী ছাত্র রাজনীতির যে ক'জন পাইওনিয়ার ছিলেন, তাদের মধ্যে মোস্তফা জামাল একজন। বিগত ২০১৯ সালে লামা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের ঠিক একদিন আগে সকলের মনোনীত ও লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল আকস্মিক মৃত্যু বরণ করেন। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি তাৎক্ষনিকভাবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তফা জামালকে নির্বাচন করার জন্য বলেন। সেবার তিঁনি বলা যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিহীন নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। তবে আলমগীর নামের একজন তরকারি বেপারি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সেই নির্বাচনে। লামাবাসীর প্রানপ্রিয় অভিভাবক মরহুম ইসমাইল এর হঠাৎ মৃত্যু শোকের রেস না কাটতেই সেবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায়, মরহুমের পরিবার থেকে কেউ প্রার্থীতা করেন নাই। তবে এবার তার পরিবার থেকে মরহুম ইসমাইল এর আপন সহোদরদের কেউ প্রার্থীতা করতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। অপরদিকে দলীয় প্রতীক বিহীন নির্বাচন দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশে হবে, এমন প্রত্যাশা থেকে আরো কিছু হেভিওয়েট প্রার্থীর কথা মানুষের মুখে মূখে ধ্বনিত হচ্ছে। এদের মধ্যে প্রথমে ও বেশি উচ্চারিত হচ্ছে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের দু'বারের সাবেক চেয়ারম্যান  জাকের হোসেন মজুমদারের নাম। তাঁর পিতা মরহুম আমির হোসেন মজুমদার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়ে ৫ বার চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।  পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিগত ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে আমির হোসেন মজুমদারকে বিগত ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা করার জন্য তৎসময়ে লামার কিংবদন্তি আলীমিয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা পোষন করে আমির হোসেন মজুমদার নিজেই ওই সময় আলীমিয়াকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর ১৯৮৯ সালে আমির হোসেন মজুমমদার বান্দরবান স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকার ও জেএসএস এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ায়, ৫৪% বাঙ্গালীর অধিকারের প্রশ্নে পাহাড়ে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হয়। তৎসময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রিট মামলা হয়। সেইসব আন্দোলন ও মামলায় আমির হোসেন মজুমদারের ভূমিকা এই অঞ্চলের মানুষের অন্তরে রেখাপাত করেছে। ফলশ্রুতিতে তিঁনি সার্বজনীন একজন নেতা হয়ে উঠেন। গত ২০০৮ সালের ২৭ শে মার্চ আমির হোসেন মজুমদারের মৃত্যুর পর তার ছেলে জাকের হোসেন মজুমদার, বাবার জনপ্রিয়তা ও নিজের শিষ্টাচার, সততা, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দল মত নির্বিশেষে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২৪ এ দলীয় প্রতীক বিহীন হলে জাকের হোসেন মজুমদার নির্বাচন করবেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেব আরো যাদের নাম শুনা যাচ্ছে, তাদের আরেকজন হলেন, লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চারবারের টানা নির্বাচিত গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মারমা। দেশ স্বাধীনের পর গজালিয়া ইউনিয়নে টানা প্রায় চার দশক নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ম্রাথোয়াই অং চৌধূরীকে হারিয়ে (সম্পর্কে বাথোয়াইচিং এর মামা) ২০০৩ সাল থেকে অদ্যবধি তিনি গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান। হেভিওয়েট প্রার্থী সেও একজন। কারন, লামায় বিগত কয়েকটি নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটের ফলা ফলে দেখা গেছে, উপজাতি ভোটের একমুখী স্রোত রয়েছে। লামা উপজেলায় ৮২ হাজার ভোটের মধ্যে উপজাতি ভোটার প্রায় ২৪ হাজার। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, উপজাতিরা তাদের স্বজাতের প্রার্থীর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আদর্শ খোঁজেনা। সুতরাং তাদের কমপক্ষে ১২ হাজার ভোট উপজাতি প্রার্থীর বাক্সে যাবে। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, এর আগে ২০০৮ সালের দলীয় প্রতীক বিহীন নির্বাচনে জেএসএস লামা রাজনৈতিক শাখার সভপতি অংগ্যা মার্মা ৮ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিল। সে বছর প্রায় তের হাজার ভোট পেয়ে সামান্য ভোটে বিএনপি সমর্থিত আওয়ামীলীগ নেতা রফিক আহমেদকে পরাজিত করে আওয়ামিলীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল নির্বাচিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে প্রায় ৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিএনপি নেতা থোয়াইনু অং চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছিল। এলাকায় তুমুল জনপ্রিয়তা ও যথেষ্ট উন্নয়ন করার পরও  আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল কেন পরাজিত হলেন(?)। এর উত্তর খোঁজতে গিয়ে ভোটের রেসিও বিশ্লেষণ করতে থাকে অভিজ্ঞ মহল। সে বিশ্লেষনে মুলত: উপজাতিদের রিজার্ভ ভোটের ধারণাটি সবার মধ্যে পরিস্কার হয়ে উঠে। সুতরাং অভিজ্ঞ মহল জাকের মজুমদার, বাথোয়াইচিং মার্মাকে অথবা থোয়াইনু অং চৌধুরীর মতন প্রার্থীর গুরুত্ব বিবেচনায় রেখেছেন। তবে এই তিনজনের কেউ নির্বাচন করবে কিনা; তা এখনো পরিস্কার নয়। সম্ভাব্য অন্যান্য যে সব প্রার্থীদের কথা শুনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে মরহুম আলহাজ্ব মোঃ আলীমিয়ার ছেলে মোঃ আবু তাহের এর নামও উল্লেখযোগ্য। তারও রয়েছে পারিবারিক পরিচিতি ও বিএনপির সমর্থন। তবে ভোটের সমীকরণে সজ্জন ও ব্যক্তি ইমেজের প্রতি তাকালে জাকের হোসেন মজুমদারকে ভোটমাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা না করার কোনো সুযোগ নেই। এমন মন্তব্য করছেন সর্বজন।
জাহিদ হাসান,লামা(বান্দরবান)প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)