আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

Generic placeholder image
  Ashfak

২০২৪ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারী প্রথম পর্বের বিশ^ ইজতেমা শুরু হয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে চলবে থেকে ১১ ফেব্রুয়ারী। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামাত বন্দী হয়ে বিশ^ ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ৩৬০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা বিশাল ময়দানে প্রবেশ করে জেলা ভিত্তিক খিত্তায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। মুসল্লীরা ময়দানে প্রবেশের পথে “যার যার ডাইনে চলি ভাই- জিকিরে ফিকিরে চলি ভাই” বলতে বলতে ওযু, গোসল, থাকা, খাওয়া এবং অংশগ্রহনের মধ্যদিয়ে ইতিমধ্যে বিশাল ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজ দেশের সর্ব বৃহৎ জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম পর্বের জুম্মার নামাজে ৩০ লাখের অধিক মুসল্লী হতে পারে। সোনাবানের শহর খ্যাত টঙ্গীর কহর দরিয়া তুরাগ নদের তীরে শুরু হলো বিশ্ব মুসল্লিম উম্মাহ ও তাবলীগ জামাতের ৫৭তম গণজমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। মুসলমানদের এ মহাসমাবেশে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ধসঢ়; হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটি। বৃহস্পতিবার ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রস্তুতি কাজ শেষ। ১৬০ একর বিস্থৃত এলাকা জুড়ে ইজতেমা ময়দানে বিশাল সামিয়ানা টানানোসহ যার যার বিছানাপত্র ঘুছিয়ে এবং শীতকে উপেক্ষা করে আল্লাহর নামে জিকির আসকারে মশগুল মুসল্লরিা। তবে ময়দানের বেশ কিছু জায়গায় টানানো পুরোনো সামিয়ানা ছিঁড়ে ঝুলে পড়তে দেখা গেছে। এছাড়াও খিত্তা ভিত্তিক বেধে দেয়া হয়েছে মাইক ও বৈদ্যুতিক তার টানিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে তাবলীগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর কাজে যোগ দিতে ময়দানে এসেছেন। ময়দানে আজ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারী দুপুর পর্যন্ত প্রথম পর্বে মুসল্লীরা অংশ নিবেন এবং তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনবেন। সেই সাথে ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুসল্লিরা জামাত বদ্ধ হয়ে ১, ২, ৩ চিল্লায় বেরিয়ে যাবেন আখেরী মোনাজাতের পরপরই। এদিকে বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে শিল্পাঞ্চল খ্যাত টঙ্গীর আবাসিক বাসা বাড়িতে চলছে সাজ সজ্জার কাজ আর গৃহীনিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ঘর গোছানো ও আত্বীয় স্বজনসহ বন্ধু- বান্ধবদের থাকা খাওয়ার আপ্যায়নে প্রত্যাশায়। ইজতেমা ময়দান সূত্রে জানা যায়, ইজতেমার দুই পর্বের প্রথম পর্ব আজ শুক্রবার ভোর থেকে প্রথম ধাপ আম-বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারী জানুয়ারী আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। ইজতেমা ময়দানে টাঙ্গাইল থেকে আসা মো. আমির আলী (৬৫) জানান, আল্লাহর নৈক›ঠ লাভের আশায় ১৭/১৮ জনের একটি দল গত ১০ বছর যাবৎ এই ময়দানে কাজ করছি। শীত বা বৃষ্টি কোন বাঁধা নয়। আল্লাহতায়ালাকে রাজি খুশি করতে স্বতর্স্ফুত ভাবে ময়দানে আমরা এসেছি দেশ বিদেশের মুসল্লীরা আসছে। যতদিন বেঁচে থাকবো এভাবেই আল্লাহর নামে কাজ করবো। ইজতেমা ময়দানের মুরব্বী মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মো. মাহমুদ (৬২) জানান, বিদেশী ওলামা মাশায়েখরা বিশেষ করে বিদেশী মেহমান সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা এ দেশে অবস্থান করে দাওয়াতী কাজ করছেন। ইজতেমা ময়দানের সব কাজ দ্রুত শেষ হয়েছে। টুকিটাকি কিছু কাজ বাকী আছে এগুলো থাকবেই। গাজীপুর ২ আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোছা. জায়েদা খাতুন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদ্বয় প্রতিদিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ময়দানের বিভিন্ন কার্যক্রমের খোঁজখবর নেয়াসহ বিভিন্ন ভুমিকা পালন করছেন এবং মুসল্লীদের শান্তি রক্ষায় ৭ স্তরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। মো. জাহিদ আহসান রাসেল-এমপি জানান, ইজতেমা ময়দানে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে কোন ধরনের অসুবিধায় না পড়েন তার জন্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ও ব্যবসায়ীসহ কলকারখানার শ্রমিক-মালিক এবং বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আল্লাহ্ধসঢ়;র বিশেষ রহমত হাসিলের আশায় বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে কাজ করেছেন। কেউ প্যান্ডেলের চট টানানো, কেউ খুঁটি প্ধুসঢ়;্ধসঢ়;ঁতা, কেউ কেউ বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেয়াসহ কেউ কেউ আবার মাঠ পরিস্কার করেছেন। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতির প্রায় শতকরা ৯৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের উন্নয়ন কাজে অংশ গ্রহনকারী নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫) জনান, ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ তাবলীগের মুরুব্বীদের তদারকিতে হয়েছে। সব কাজ করা হেেয়ছে মোশাহারার (পরামর্শ) মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরী, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। বিদেশী মুসল্লিদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ কামরা তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ইজতেমার বয়ান মঞ্চ তৈরিসহ সেটিকে রং ুদিয়ে সাঁজানো হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের ওজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্যে ইজতেমা ময়দানে গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ওজু-গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ময়দানে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্থ অজু গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক শতাধিক ড্রাম ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ করা হবে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রায় অর্ধশত চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা চলাকালে প্রতিদিন গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপরাসণ কার্যক্রম চালানো হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রাস্তার উপর পার্কিং করা গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। প্রশাসন বিভিন্ন সেক্টরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ র‌্যাবসহ এবার পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবে। পুলিশ ও র‌্যাব নিয়ন্ত্রিত সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। এছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ইজতেমা ময়দানের উত্তরে নিউ মন্নু টেক্স্রটাইল মিলস প্রাঙ্গন, নিউ অলিম্পিয়া ও আশপাশের এলাকা, হোন্ডা রোড, আই আর আই রোড এলাকায় অস্থায়ী ভাবে বাজার বসিয়ে ভিট প্রতি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, কোন কোন জায়গায় ভিট প্রতি নগদ ২ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রতিদিন-ভাড়ায় বিভিন্ন পন্য-সামগ্রীর দোকানপাট এবং আলাদা ভাবে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবসা করছে বেশ কয়েকটি ইজারাদার গ্রুপ। এ বছর ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় বিপুল পরিমান ভিক্ষুকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ইজতেমা ময়দানের আশপাশে এবং ময়দান অভ্যন্তরের কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে এবং বৃষ্টির পর হালকা ঠান্ডা পড়েছে। আকাশ মেঘলা থাকায় সামনে বৃষ্টির আরো আশংকা রয়েছে। এদিকে বিশ^ ইজতেমা ময়দানে আসা মুসল্লীরা ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ময়দানের পাশে স্থাপিত ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে শত শত মুসল্লী লাইন ধরে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ^ ইজতেমা আয়োজকরা জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ সার্বিক প্রস্তুতির কাজ হয়েছে। প্রথম পর্বের ইজতেমা শুরুর ২ দিন আগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছ্ধেসঢ়;। আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকলে এবার বিশ^ ইজতেমার প্রথম পর্বেও জুম্মার নামাজে এবং আখেরী মোনাজাতে প্রতিবছরের চেয়ে বেশী মুসল্লীদেও সমাগম ঘটবে।


 মৃণাল চৌধুরী সৈকত,টঙ্গী 
 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)