বিজয়ের ৫২ বছরেও খানসামায় সংরক্ষিত হয়নি বধ্যভূমি

Generic placeholder image
  Ashfak

 স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫২ বছরেও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সংরক্ষণ করা হয়নি গণকবর, ফলে অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে খানসামা ডিগ্রি কলেজ ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা।

মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সদস্য বাবু অমিয় কুমার গুহকে ১৯৭১ সালের ১ জুন গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড.জহির উদ্দিনের বাড়ি থেকে আটক করে পাকিস্তানি বাহিনী। বাবু অমিয় কুমার গুহকে ২ জুন খানসামা থানায় বন্দি করে রাখে হয়। এরপরের দিন রাজাকাররা পাকবাহিনীকে খবর দিয়ে বাবু অমিয় কুমার গুহকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সাইকেলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী ও খানসামা উপজেলার সংযোগস্থল পুলহাট নামক স্থানে ইছামতী নদীর তীরে গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে রেখে চলে যায়। একই স্থানে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া টেডি ডাক্তার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী খু্ট্টু মিয়াকে হত্যা করে পাকবাহিনীর ঘাতকরা। পরে স্থানীয় নজরুল ইসলাম, তরনী কান্তসহ অনেকে তাদের লাশ নদী থেকে তুলে গণকবর দেন।

কিন্তু স্বাধীনতা, বিজয় ও শহীদদের মৃত্যুর ৫২ বছরেও এসব পরিবার 'শহীদ পরিবার' হিসেবে সরকারীভাবে স্বীকৃতি পায়নি। শুধু অমিয় কুমার গুহয়ের নামে একটি রাস্তার নামকরণ ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভিন্ন দিবসে খেলাধুলার নামকরণ ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন সাহায্য-সহানভূতি পায়নি পরিবারগুলো।

আর গণকবরের তালিকা ও সংরক্ষণ, শহীদ পরিবারের তালিকা ও রাজাকারের তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুধীজনরা।

তবে গত ৯ বছরের ধারাবাহিকতায় খানসামা ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে ইছামতী নদীর তীরে অসংরক্ষিত বধ্যভূমিতে শহীদের স্মরণ করা হয়। এর আলোকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় স্মৃতিস্তম্ভে খানসামা ডিগ্রি কলেজ শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ, নীরবতা পালন করেন। এরপরে শহীদ অমিয় কুমার গুহের দৌহিত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, খানসামা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এরশাদ জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন  উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, খানসামা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষকসহ কর্মচারীগণ।

গণকবরের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, 'অমানবিক ভাবে নির্যাতন করে অমিয় বাবুসহ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই স্মৃতি আজও আমাদের চোখে ভাসে কিন্তু এই স্মৃতিময় স্থানে সংরক্ষণে কোন উদ্যোগ নেই। যা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। তা না হলে কবরগুলো নদীতে বিলিন হয়ে যাবে।'

অমিয় কুমার গুহের দৌহিত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ বলেন, 'স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থে আমার দাদু মৃত্যুর আগপর্যন্ত আপোষ করেন নাই। যার ফলে তাঁর এই করুন মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করলেও আমরা এখনো সরকারী তালিকভুক্ত হয়নি এবং গণকবর সংরক্ষন করা হয় নাই। তাই গণকবর সংরক্ষন ও শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর অনুরোধ রইলো।'

বীর মুক্তিযোদ্ধা রোস্তম আলী বলেন, 'গণকবর সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শহীদের কারণেই আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি৷ তাই তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে গণকবর সংরক্ষনের জোর দাবি জানাচ্ছি।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজউদ্দীন বলেন, 'উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠানে এরই মধ্যে বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী বছরের ২৬ মার্চসহ সকল কার্যক্রম সেখানেই করা হবে।'

ছবির ক্যাপশন: ১.দিনাজপুরের খানসামায় অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে শহীদ পরিবার ও খানসামা ডিগ্রি কলেজ।

দিনাজপুরের খানসামায় নদীতে বিলীনের আশঙ্কা বধ্যভূমিটি।
মো. আজিজার রহমান ,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)