লালমনিরহাট জেলা কারাগারে তরুণ-তরুণীর বিয়ে

Generic placeholder image
  Ashfak

আট লাখ টাকা দেনমোহরে কারাগারেই বিয়ে দেওয়া হয় তরুণ-তরুণীর। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এই প্রথম এ রকম বিয়ের আয়োজন করা হয় লালমনিরহাট জেলা কারাগারে। 

বর ছিলেন কারাগারে। বাইরে থেকে ডেকে নেয়া হয় কনেকে। সঙ্গে উভয়পক্ষের স্বজন ও অভিভাবকদের। পরে দুই পরিবারের সম্মতি ও আপিল বিভাগের আদেশে ধর্ষণের শিকার তরুণীর সঙ্গে আসামির বিয়ে দেয় লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ওই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে একই এলাকার রকিবুজ্জামান রকিবকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দুইজনকে বিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে রকিবের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একইদিন অপহরণের শিকার হওয়া কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং রকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মেডিকেল পরীক্ষায় ওই মেয়ে গর্ভবতী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে ওই গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। মামলায় গত জুন মাসে আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। 

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আসামি রকিবুজ্জামান রকিবের জামিন স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগ পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালতে। এরমধ্যে জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষও। 

শুনানিতে আসামিপক্ষ লিখিতভাবে আদালতকে জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ের ব্যবস্থা করতে উভয়পক্ষ রাজি হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা আপিল বিভাগকে জানান, তার মেয়েও বিয়ে করতে আগ্রহী। পরে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ে সম্পন্ন করেন জেল সুপার উমর ফারুক। পরে ৪ ডিসেম্বর কারাগারে থাকা আসামির জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। কিন্তু কিছু জটিলতায় বিলম্ব হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে আমরা অনেক খুশি। সেই আদেশে আমি শুক্রবার বিয়ের কার্ড করে শত শত মানুষকে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছি। কিন্তু পরে জানতে পারি আমার মেয়ের জামাই এখনো কারাগার থেকে বের হননি।

লালমনিরহাট জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আমজাদ হুসাইন সরকার জানান, আদালতের আদেশে কারাগারেই বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেল সুপার উমর ফারুক জানান, দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে নিকাহ রেজিস্টারের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দেন মোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। আপিল বিভাগ থেকে আসামি মুক্তির নির্দেশের কাগজপত্র এলেই সে কারাগার থেকে মুক্তি পাবে।
এস.বি-সুজন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)