উন্নয়নের মহাসড়ক থাকলে নেই বাস সার্ভিস“জনগণের চলাচলের ভরসা চার্জার ভ্যান ও অটোরিক্সা”

Generic placeholder image
  Ashfak

যাত্রীবাহী বাসসহ, ভারী যানচলাচলের জন্য রয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্টও তবুও বাস সার্ভিস বন্ধ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে । যে মহাসড়ক দিয়ে আপনি যেতে পারেন ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, নীলফামারী সৈয়দপুর কিংবা রংপুর। ১৭ বছর ধরে অত্র এলাকার চলাচলের একমাত্র ভরসা, চার্জার ভ্যান কিংবা অটোরিক্সা,ভ্যান। এ দৃশ্য দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার। যে মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে ঢাকা যাওয়ার নাইট কোচ। উপজেলার প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক দখল করে আছে ভটভটি, নসিমন, অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যান। বাস চলাচল না করায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এসব অবৈধ যানবাহনেই চলাচল করতে হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষকে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানিও। দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্টের দিকে এগুতে থাকলেও যাত্রীবাহী বাসের সন্ধান মেলে না এই উপজেলায়।

আধুনিক যুগেও জনগণের এই দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে খোদ সরকারি দলের নেতারই অভিযোগ করছেন, সুবিধাবাদী একটি চক্রের কারণেই বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও এ উপজেলায় চলাচল করতে পারছে না যাত্রীবাহী বাস। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে খানসামা উপজেলার সড়কপথে দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। আর এখান থেকে নীলফামারী জেলা সদরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সৈয়দপুরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার এবং বীরগঞ্জের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। উপজেলা সদর থেকে এসব স্থানে নির্মিত হয়েছে, আধুনিক পাকা সড়ক। কিন্তু বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী বাস। গত কয়েক বছরে ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যানে খানসামা থেকে নীলফামারী ও ইপিজেড যেতে প্রাণ গেছে কয়েকজনের। অবৈধ এসব যানে চলাচল করতে এই উপজেলায় প্রতি বছরই ঝরছে বহু মানুষের প্রাণ।

স্থানীয় দোকানদার আসাদুজ্জামান (বুড়া) বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন বাসস্ট্যান্ডে দোকান করতাম। এরপর বাস বন্ধ হয়ে যায়। বাস বন্ধ হওয়ায় আমি বেকার হয়ে পরি। এখন বর্তমানে ছোটখাটো ব্যবসা করি। ব্যবসার কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। তাই আমি চাই পুনরায় যেন, বাস চালু করা হয়।'

স্থানীয় শিক্ষক হুমায়ুন বলেন, 'আমাদের উপজেলা অনেক আগেই বাস চলাচল করেছিল। আমরাও এই বাসে করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলাম। আমি চাই আবারো পুনরায় বাস চালু করা হোক।'

এ বিষয়ে রাশেদ মিলন বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের উপজেলায় বাস চলাচল না করাটা লজ্জাজনক। যে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, সে এলাকা উন্নত বলাটা কতটুকু যৌক্তিক?

ভুক্তভোগী জুয়েল বলেন, 'স্মার্ট  এর যুগে, সব উপজেলায় বাস চললেও আমাদের এ উপজেলায় চলে না এটা মানা যায় না।'

সৈয়দপুরের উদ্দেশ্য রওনা দেওয়া পথচারী রেজা বলেন, 'অটোরিকশার জন্য অপেক্ষায় আছি। বাস তো দীর্ঘ দিন ধরে নেই। তাই বাধ্য হয়ে যাইতে হচ্ছে এ সব অবৈধ যানবাহনে।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, 'এ সময়ে আমাদের উপজেলায় কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে না। এটা লজ্জাকর। চার বছর আগে এখানে বিআরটিসির বাস চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবং চালুও হয়। কিন্তু অবৈধ যানবাহনের চাপে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।'

বাস না চলেও রয়েছে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের শাখা। স্থানীয় শ্রমিক নেতা তালহা চৌধুরী বলেন, 'রাস্তা সরু হওয়ায় ১৭ বছর আগে এ উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে রাস্তাগুলো ভালো হওয়ায় আবার বাস চলাচলের জন্য মোটর মালিক সমিতিকে জানানো হয়েছে।

দিনাজপুর মোটর পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ভবানী শংকর আগরওয়ালের কাছে জানতে চাইলে। তিনি বলেন, 'আমাকে বিষয়টি এমপি সাহেব ও উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন বাস চালু করার জন্য। এবার আপনি বললেন। আগামী ৫ তারিখে আমাদের একটি মিটিং আছে, সেখানে আমি এই বিষয়টি জানাবো । আশা করছি খুব শীঘ্রই বাস পাবেন।'

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন জানান,' আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানাবো বাস চলাচলের বিষয়টি। এই উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চালু করতে হলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।'
মো. আজিজার রহমান,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)