প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা,গাজীপুর জেলা এবং মহানগরের ৪৭৮ মন্ডপে চলছে প্রস্ততি

Generic placeholder image
  Ashfak

শরৎ ঋতুর অবগাহিকায় মা আসছেন বাংলার উৎসব মুখর প্রতিটি পূজা অঙ্গঁনে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসবের আমেজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বাঙ্গালী সনাতন সমাজের ঘরে ঘরে। আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়া এবং ২০ অক্টোবর মহাষষ্টির মধ্যদিয়ে শারদীয় দূর্গোৎসব শুরু হতে চলেছে। মাতৃরুপী দেবী দূর্গার আর্শিবাদ পাওয়ার আশায় সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিটি মানুষ প্রতিক্ষায় থাকেন পুজার এই শুভ লগ্নের। শাস্ত্রীয়মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় এ বছর মা দুর্গা গজে চড়ে মর্ত্যলোকে আসছেন শান্তির বার্তা নিয়ে। মা দুর্গা শ্বশুর বাড়ী কৈলাস থেকে বছরে একবার কন্যা রূপে পিত্রালয়ে বেড়াতে আসেন। ভক্তরা মনে করেন, অশুর শক্তির বিনাশে সৃষ্টি হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত অশুভ অশুর বিনাশী দেবী দুর্গা। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা এবং আগামী ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়াদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানা এলাকায় এ বছর ১২০টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। মহানগরেরর ৮টি থানার মধ্যে টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকায় ৯টি আর টঙ্গী পশ্চিম থানা এলায় ২ টিসহ পূবাইল থানায় ১৩টি, গাছা থানায়-১৪টি, কাশিমপুর থানায়-১৫টি, জয়দেবপুর সদর থানায়-২৩টি- বাসন থানায়-১৭টি, কোনাবাড়ী থানায়-৬টি, সালনা সাংগঠনিক থানায়-২০টি এবং গাজীপুর জেলার ৫টি থানা যথাক্রমে : গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কালিয়াাকৈর, কালিগঞ্জ ও কাপাসিয়ায় মোট-৩৫৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশপাশের একাধিক পূজা মন্ডপে গিয়ে দেখা যায়, এবারের পূজাকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রতিমায় শিল্পীর শৈল্পিক কারুকাজে মনোমুদ্ধকর করে সজ্জিত করতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। মহানগরের টঙ্গী বাজার কেন্দ্রিয় শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির এর মৃতশিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা ধরে রাখতে এ পেশা বেছে নিয়েছেন। টঙ্গী বাজার দূর্গা মন্দিরে কর্মরত মৃতশিল্পী কার্তিক পাল জানান, প্রতিটি মন্ডপের প্রতিমা তৈরিতে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহন করা হয়ে থাকে। টঙ্গী পূর্ব থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু নারায়ন রায় বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে এ বছর টঙ্গী পূর্ব এবং পশ্চিম থানা এলাকায় ১১ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলায় দূর্গোপূজোর আর্ভিভাব : এই বাংলায় দুর্গাপুজোর ইতিহাস অতি প্রাচীন। তাহিরপুর রাজবংশের রাজা ছিলেন ইতিহাসখ্যাত কংস নারায়ণ রায়। ৮৮৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসের মহাষষ্ঠী তিথিতে অকালবোধনের মাধ্যমে কংস নারায়ণ রায় দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। কংস নারায়ণের প্রথম দুর্গা পূজাটি হয়েছিল রাজবাড়ি সংলগ্ন প্রধান ফটকের পাশেই একটি বেদীতে। দেবী দুর্গার সমস্ত গহনা করা হয়েছিল স্বর্ণ ও মনি-মুক্তা দিয়ে। পরে পাশেই তিনি নির্মাণ করেন প্রথম দুর্গা মন্দির। রাজপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই মন্দিরে দুর্গাপুজা হতো। দেশ বিদেশের বিভিন্ন এলাকার সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ আসতেন পূজায় অংশ নিতে। এছাড়া এই বাংলায় দুর্গাপুজোর ইতিহাস অতি প্রাচীনতো বটেই। তবে ওপার বাংলাতেও তাই। বস্তুত, অবিভক্ত বাংলার দুর্গাপুজো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপুজোর কথা। যা প্রায় আট শতাব্দী পুরনো। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দিরও বটে। এই মন্দিরে প্রথম দিকে অষ্টভুজার প্রতিমা এবং পরবর্তী সময়ে দশভুজা দুর্গা প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজিত দুর্গার আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নাম অনুসারেই ঢাকা শহরের নামকরণ করা হয়। এছাড়াও ছিল ব্যবসায়ী নন্দলাল বাবুর মৈসুন্ডির বাড়ির দুর্গাপুজো। সিপাহী বিদ্রোহের কয়েক দশক আগে ১৮৩০ সালে পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর অঞ্চলের আয়োজিত হয়েছিল তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো। ছিল তিনশো বছরের পুরনো শ্রীহট্টের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাপুজো। প্রতিমার গায়ের রঙের জন্য বিখ্যাত ছিল এই পুজো। দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থী আসতেন এই পুজো দেখতে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে দুর্গাপুজো সমাজের বিত্তশালী এবং অভিজাত হিন্দু পরিবারদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত শতাব্দীর শেষের দিকে এবং এই শতাব্দীর শুরুর দিকে দুর্গাপুজো তার সর্বজনীন রূপ পায়।
মৃণাল চৌধুরী সৈকত,সিনি : স্টাফ রিপোর্টার,
 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)