তদন্ত কমিটিতেই আটকে জবির নানামূখী ইস্যু

Generic placeholder image
  Ashfak

তদন্ত কমিটিতেি আটকে যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ইস্যু। পুনরায় তদারকি আর তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করে বিচারের চিহ্ন খোঁজে পাওয়া ভার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় লিখিত অভিযোগ গেলে প্রথমেই তা প্রক্টর অফিসের ফাইলে জমে তারপর হয় তিন বা ততোধিক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির। যদের প্রতিবেদনের সময় বাঁধা হলেও কোনো ফল প্রত্যক্ষ হয় না অনেকদিন পরেও।
প্রথমেই  গত ১০ মাসের ঘটনা খুজে দেখা যায় শ্লীলতাহানি, নারীকেলেংকারী কিংবা প্রশ্নফাঁসের ঘটনার মধ্যে সমাধান হয়েছে মাত্র কয়েকটি। গত ১০ মাসের মধ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা দেখে নেয়া যাক।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের  ছাত্রীকে প্রশ্ন সরবরাহের অভিযোগে বিভাগের শিক্ষক জুয়েল কুমারের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 
এতে আহ্বায়ক ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো.শাহজাহান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো.আবুল হোসেন ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন ড. মো. মনিরুজ্জামান খন্দকার।
৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহজাহান জানান,শিক্ষক জুয়েল কুমার সাহার নামে অভিযোগের তদন্তের কাজ মোটামুটি শেষের দিকে আছে। শেষ হলেই জমা দেওয়া হবে।
গত ১৬ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক  ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক নূরে আলম আব্দুল্লাহ ও সহকারী প্রক্টর শাহনাজ পারভীন।

ছাত্রীহলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড.আইনুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি অনেক বড় হওয়ায় সময় লাগছে। তবে তখন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ছিলাম বিধায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন আমি তদন্ত কমিটিতে থাকছি কিনা সেটি জেনে নিতে হবে। তদন্তের কাজ শেষ। প্রতিবেদন লিখা হচ্ছে।
এছাড়া গত জুন মাসে জবি কর্মকর্তা কাজী মনিরের বিরুদ্ধে টেন্ডার-চাষাবাদের অভিযোগে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ-উল-আলম-আলমকে আহ্বায়ক ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.আইনুল ইসলামকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কাজী মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আলম এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন নাই।

৩১জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় এবং ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগের নারী কর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের হাউজ টিউটর ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. প্রতিভা রাণী কর্মকার ও সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সায়েদুর রহমানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের মাঝে সমাধান করে দেওয়াতে অধিকতর তদন্তের দরকার হয়নি।

২৮ আগষ্ট জবি ছাত্রলীগ কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সর্বশেষ সভাপতি সাইদুল ইসলাম সাঈদ কর্তৃক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড.শাহ মো. নিসতার জাহান কবিরকে হুমকির ঘটনায় তাৎক্ষনিক তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
উক্ত ঘটনায় মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহাকে আহ্বায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার হেদায়েত উল্লাহ তুর্কিকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অপর সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। 
ঐ ঘটনায় জবি ডিবেটিং সোসাইটি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সভাপতি সাঈদুল ইসলাম সাঈদ দ্বারা হেনস্তার অভিযোগের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রস্তুত রয়েছে। আগামী সপ্তাহে রিপোর্ট জমা দিবেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড.অশোক কুমার সাহা। 
সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মানিক মুন্সীর বিরুদ্ধে লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের ডিন মনিরুজ্জামান খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক নীল উৎপল সরকার, নীগার সুলতানা ও সহকারী প্রক্টর রেজাউল হোসাইনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গণিত বিভাগের শিক্ষক মানিক মুন্সীর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারি অভিযোগ তদন্তের জন্য আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক  অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান।
এছাড়াও ২০২২ সালের আগস্ট মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স (আইকিউএসি) সেলে কাঁচের দরজা ভেঙে চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও পরবর্তী ফলাফল জানে না কেউ। 
বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে সবকিছু দ্রুত করতে গেলে অনেক কিছুই বাদ পড়ে যায় তাই হয়তো কিছুটা সময় নিয়ে এই কাজগুলো করতে হয়।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড.মোস্তফা কামাল বলেন, যারা  সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বে আছেন তাদের উচিত সঠিক সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা, তারা কেন করতে পারছেন না এটা তারাই বলতে পারবেন।
অমৃত রায়, জবি প্রতিনিধি
 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)