রাণীশংকৈলে ব্যাপকহারে গরুর লাম্পি স্কিন রোগে দিশেহারা কৃষক-খামারি

Generic placeholder image
  Ashfak

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে ব্যাপকহারে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলায় ৮ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৪ শতাধিক গরুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। এ রোগের লক্ষণ ও সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর প্রয়োজন মতো ভ্যাক্সিন না থাকায় প্রান্তিক খামারি ও কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। এরপর টাকা দিয়েও সব ঔষধ ও ভ্যাক্সিন পাওনা যাচ্ছেনা। তাই হতাশায় ভুগছেন অনেকেই। জানা গেছে এটা এক ধরনের ভাইরাস। যা মশা- মাছি, আটালি ও ইনজেকশনের সুচের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। মূলত, এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের সময় প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে। যে সময়ে মশা-মাছি অধিক বংশবিস্তার করে সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। বুধবার (২৫ জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে এ উপজেলায় প্রায় ৪ শ্#৩৯;র মতো গরু ও বকনা বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এ রোগের সংক্রমণ। বিভিন্ন তথ্য মতে উপজেলায় এ যাবৎ প্রায় ৩৫ টি গরু ও বাছুর মারা গেছে। এরমধ্যে বকনা বাছুরের সংখ্যা বেশি।উপজেলার খনজনা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টেনটেনুর ১ টি বাছুর একই গ্রামের সলেমান মুনসির ১ টি বাছুর, রাঙ্গাটুঙ্গী লুৎফর রহমানের ১ টি গরু এ রোগে মারা গেছে বলে তাঁরা জানান। সন্ধ্যারই খুটিয়াটুলি গ্রামের খামারি আব্দুর রহমান বলেন, এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে অত্যন্ত দূর্গন্ধ ছড়ায়। তিনি তার খামারের একটি আক্রান্ত গরুর অনেক চিকিৎসা করে কোন প্রতিকার না পেয়ে শেষে গরুটিকে জবাই করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন।নয়ানপুরের আমিরুল ইসলাম বলেন, আমার গাভিন গরুটি প্রায় ১৫ দিন থেকে লাম্পি রোগে আক্রান্ত, প্রাণী পল্লী চিকিৎসক আজিজকে দেখালে তিনি ৪ দিনে ৪ টি টাইজন ২ গ্রাম এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করে। এতে আমার গাভিটির অবস্থা প্রচন্ড খারাপ হয়ে পড়ে, মরে না বাঁচে আল্লাহই জানে। মহারাজা টাঙাগজ গ্রামের রব্বানী ও মিজান, ভবানীপুরের গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের দুটি করে গরু আক্রান্ত হয়েছে এলাকার প্রাণী পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে গরুগুলোর অবস্থা আরো খারাপ এখন পশু হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। কি যে আছে কপালে ! বিশেষ করে পল্লী প্রাণী চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার জন্য এ রোগে কিছুসংখ্যক গরু মারা যাচ্ছে বলে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর মনে করছেন। রাণীশংকৈল উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মৌসুমী আক্তার জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ টি লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে আসা গরুর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি ও পরামর্শ দিচ্ছি। প্রান্তিক গ্রামের কৃষক-খামরিরা গরু আক্রান্তের পর এলাকার প্রাণী পল্লী চিকিৎসক দিয়ে ভুল চিকিৎসা করায়, গরুর অবস্থা খারাপ করে শেষমেশ পশু হাসপাতালে নিয়ে আসে। যা দেরি হয়ে যায়। আমাদের খবর দিলে আমরাই বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে পারি। কিন্তু তারা তা করেননা। আমাদের সাধ্যমতো বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে খোঁজ নিয়ে ঘুরে প্রতিদিন অনেক গরুরু চিকিৎসা দিয়ে দিচ্ছি।তবে ভ্যাক্সিনের স্বল্পতা রয়েছে। এমনকি ফার্মেসিতেও লাম্পি রোগের ভ্যাক্সিন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।তিনি আরও বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এলএসডি আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়ায় গুটি গুটি আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ রোগটি মূলত মশা- মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে ছড়ায়। এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। একটু সচেতন হলেই এই রোগ নিরাময় সম্ভব। লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) মূলত শঙ্কর জাতের গরু বেশি আক্রান্ত হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারি ও কৃষক পর্যায়ে সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ, সভা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের করণীয় বিষয়ে কাজ করছে। খামার ও গোয়াল ঘরের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশা-মাছি মুক্ত রাখা এবং মশারি টানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা করলে ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়।

হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল,(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
 

মন্তব্য করুন হিসাবে:

মন্তব্য করুন (0)